গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যান। একারণে সারাদেশে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পরিষদের মেয়র, চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা পলাতক থাকায় নাগরিকদের সেবা প্রদানে উল্লেখযোগ্য শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
সংকট মোকাবিলায় অনুপস্থিত প্রতিনিধিদের অপসারণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের জন্য প্রশাসক নিয়োগের পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যমান স্থানীয় সরকার আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী আনা হয়েছে। এই সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ সরকার সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর এবং উপজেলা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ও সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসাতেও পারবে সরকার।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে বিইআরসির ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
গত ১৭ আগস্ট এই পরিবর্তন এনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চারটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন:
- স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪;
- স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪;
- জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এবং
- উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪
প্রশাসনিক অচলাবস্থা দূর করতেই ১৬ আগস্ট এই অধ্যাদেশগুলোর অনুমোদন দিয়েছেল উপদেষ্টা পরিষদ। বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদে এ সভা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ, প্ৰশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা এবং জরুরি কারণে, সময়ের প্রয়োজনে, জনস্বার্থে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪', ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪' এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন খসড়া ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করিপোরেশন) আইন, ২০০৯'-এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১৩ (ক) ও ধারা ২ ৫(ক)।
১৩(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।
বিধি দিয়ে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে আদেশ দিয়ে মেয়র এবং কাউন্সিলর অপসারণ কার্যকর করতে পারবে।
২৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে বা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
প্রয়োজনে যথাযথ বলে বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে।
আরও পড়ুন: শিগগিরই পদোন্নতি পাচ্ছেন বঞ্চিত উপসচিব ও যুগ্মসচিবরা
নিযুক্ত প্রশাসক এবং নিযুক্ত কমিটির সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পৌরসভা প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪' এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো- ধারা ৩২ (ক) ও ধারা ৪২ (ক)।
ধারা-৩২ (ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৪২(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।
জেলা পরিষদ খসড়া ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪' এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১০(ক) ও ধারা ৮২ (ক)।
ধারা-১০ (ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বলে ধারা ৮২ (ক) তে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪' এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১৩ (ঘ) ও ধারা ১৩(ঙ)।
সংশোধন অনুযায়ী,বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা নারী ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে সরকার। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়োগ দিতে পারবে প্রশাসক।
আরও পড়ুন: ঢেলে সাজানো হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসন